সিভিক ভলান্টিয়ার তথা Civic Volunteer এ কথাটির সঙ্গে আমরা খুবই পরিচিত। সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের কাজ কিছুটা পুলিশদের কাজ থেকে আলাদা। আর তার জন্যই এদের নাম সিভিক ভলেন্টিয়ার্স বলা হয়েছে। যদিও এই সিভিক ভলেন্টিয়ার্স যে কথাটি অনেক আগে এত প্রচলিত ছিল না কিন্তু কয়েক বছর ধরে সিভিক ভলান্টিয়ার তথা Civic Volunteer কথাটি আমাদের কাছে খুব সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে চাকরির আকালের সময়ে অনেকেই এখন সিভিক ভলেন্টিয়ার্স পদে নিয়োগ হতে চাইছে।
Details of WB Civic Volunteers Recruitment
আগে সিভিক পুলিশ ভলেন্টিয়ারস এভাবেই এই পদের কর্মীদের ডাকা হতো কিন্তু পরে যেহেতু পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়ারদের কাজের পার্থক্য রয়েছে তাই পুলিশ শব্দটিকে উঠিয়ে দিয়ে শুধু সিভিক ভলেন্টিয়ার্স বলা হয়।
প্রকৃতপক্ষে পুলিশদের কাজের সহায়তা করার জন্য এই সিভিক ভলেন্টিয়ার্স বা Civic Volunteer পদের উদ্ভব হয়েছে।
সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের বেতনও অনেকটাই কম থাকে কিন্তু কাজের দায়িত্ব অনেক থাকায় এই নিয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ার্সরা অনেকবারই বেতন বাড়াবার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। মঙ্গলবার ঠিক এই ব্যাপারই রাজ্য সরকার প্রশ্নের মুখে পড়েছে আদালতে। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা সিভিক ভলান্টিয়ার বা Civic Volunteer নিয়ে ‘নির্দেশিকা’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজ্য পুলিশের আইনজীবীকে এই বিষয়ে আগামী ২৯ মার্চের মধ্যে নির্দেশিকা তৈরি করে আদালতে জমা দিতে হবে। সম্প্রতি বাঁকুড়া পুলিশের উদ্যোগে এই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছিল এরপরে মঙ্গলবার বিতর্কের পরে আরেকবার শিরোনামে উঠে আসে সিভিক ভলেন্টিয়াররা বা Civic Volunteer.
২০০৮ সালে প্রথম কলকাতায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য পৌরসভা গ্রীন পুলিশ নামে একটি বাহিনী তৈরি করেছিল। সূত্র অনুযায়ী জানা যাচ্ছে পুলিশের পর্যাপ্ত কর্মী না থাকার জন্যই ২০১৩ সালে রাজ্যে ৪০ হাজার পুলিশ এবং ১,৩০,০০০ সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে প্রথম থেকে সিভিক ভলেন্টিয়ার পদ নিয়ে একটা বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
বিরোধী দল এই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের ইউনিফর্ম পরা ক্যাডার বল দাবি করেন। এই বিতর্কের মধ্যে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিল সিভিক ভলেন্টিয়ার বা Civic Volunteer দের মুখ্য কাজ কি? শুরু থেকে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের কাজ নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল। যারা পুলিশ ইউনিফর্ম পড়ে থাকে তাদের প্রথম থেকে আপত্তি ছিল সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের পুলিশ তকমা যেন না দেওয়া হয়।
অনেক ভেবেই রাজ্য সরকার তখন থেকে শুধু সিভিক ভলেন্টিয়ার বলে উল্লেখ করার কথা ভাবেন। তবে সিভিক ভলেন্টিয়াররা দাবি-দাওয়া নিয়ে অনেকবারই রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানায়।
মূলত প্রথমে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের চুক্তিভিত্তিকভাবে নিয়োগ করার কথাই ভাবা হয়েছিল। বিশেষ করে পুজো বা উৎসবে মেলা প্রাঙ্গণে বা ভোটের সময় বা যে কোন জমায়েতে ভিড় সামলানো মুখ্য কাজ ছিল এই সিভিক ভলেন্টিয়ারদের। ছয় মাস অন্তর সেই চুক্তি পুনর্নবীকরণ করার কথা ছিল। এছাড়া প্রত্যেক মাসে অন্তত কুড়ি দিন কাজ দেওয়ার কথা ছিল।
আইনরক্ষার ক্ষেত্রে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা কী?
নির্দেশিকা তৈরির নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট সিভিক ভলান্টিয়ার বা Civic Volunteer দের নিয়ে পুলিশবাহিনীতেও আলোচনা শুরু হয়েছিল। মূল আপত্তি ছিল বাহিনীর নামে ‘পুলিশ’ শব্দটি নিয়ে। অন্য দিকে, নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে সেই সময় সরব হতে শুরু করেছিল সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ারদের সংগঠন।
২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাহিনীর নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি ছেঁটে দেয় রাজ্য সরকার। ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার্স’ শুধু ‘সিভিক ভলান্টিয়ার্স’ বা Civic Volunteer হয়ে যায়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাহিনী তৈরির সময়ে যা ভাবনা ছিল, তাতে পুলিশের ‘সাহায্যকারী’ হিসেবে সিভিক ভলান্টিয়ারদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করেছিল রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর।
ছ’মাস অন্তর ওই চুক্তির পুনর্নবীকরণ হওয়ার কথা। এঁদের দায়িত্ব মূলত যানশাসন ও মেলা-পার্বণে ভিড় সামলানো। নবান্নের তরফে বলা হয়েছিল, জেলা স্তরে কমিটি তৈরি করে সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার্স বাছাই করতে হবে। শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক হলেই চলবে। প্রত্যেককে মাসে অন্তত ২০ দিন কাজ দিতেই হবে।
তবে পরবর্তী সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিভিক ভলেন্টিয়ার্সদের মধ্যে যাদের কাজের দক্ষতা অনেকটাই বেশি তাদেরকে কনস্টেবল পদে পদোন্নতি দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করেন। এছাড়া ভালো কাজ করলেও পুরস্কৃত করার কথাও ঘোষণা করেন।
নবান্ন সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় অনেক কনস্টেবল পদ খালি রয়েছে। কারণ, অনেক কনস্টেবলের পদোন্নতি হয়েছে। আগামী দিনে আরও পদ খালি হবে। সেখানে ‘দক্ষ’ সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা যায় কি না, তা ভাবার জন্য তাঁর অধীনস্থ স্বরাষ্ট্র দফতরকে পরামর্শ দিয়েছেন মমতা।
সুযোগ তাঁরাই পাবেন যাঁদের নাম ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করবেন। এই দায়িত্ব মূলত থাকবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের উপরে। তিনি আবার সুপারিশের জন্য নির্ভর করবেন যে থানা এলাকায় ওই সিভিক ভলান্টিয়ার কাজ করছেন, সেখানকার ওসি এবং এসডিপিও-র রিপোর্টের উপরে।
আবেদনের যোগ্যতা ও বয়সসীমা
নিয়োগের জন্য আবেদন করতে হবে ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তারসাথে যোগ্যতা হিসাবে অষ্টম শ্রেণীর পাস হতে হবে। আবেদনকারীকে পশ্চিমবঙ্গের তাই বাসিন্দা হতে হবে। যে থানার অধীনে নিয়োগ করা হবে প্রার্থীর সেই থানার অন্তর্গত বাসিন্দা কিনা সেটাও দেখা হবে।
সরকারি কর্মীদের 18 মাসের বকেয়া DA মিটিয়ে দিলো সরকার! এককালীন টাকা পেতে চলেছে সমস্ত কর্মীরা।
তবে নিয়োগ দেওয়ার সময় এ কথাও জানিয়ে রাখা হয় সিভিক ভলেন্টিয়ার বা Civic Volunteer রা কখনোই নিজেদেরকে তাই সরকারি কর্মী হিসেবে দাবি করতে পারবেন না।। এছাড়া সিভিক ভলেন্টিয়ার হতে গেলে দু সপ্তাহের একটি প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
বেতন স্কেল
ভলেন্টিয়ার বা Civic Volunteer মাসে ন হাজার টাকা বেতন পায়। নতুন নিয়ম অনুযায়ী দৈনিক আধঘন্টা কাজ করতে হবে যদি কখনো অতিরিক্ত কাজ করতে হয় সে অতিরিক্ত কাজের জন্য কোন এক্সট্রা বেতন দেওয়া হবে না। কোন অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা জনিত কারণে সিভিক ভলেন্টিয়াররা বীমা সুবিধা পায়। এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারের বেতন মাসে ৯ হাজার টাকা।
নতুন নিয়মে মাসে ৩০ দিনই দৈনিক আট ঘণ্টা করে কাজ করতে হয়। সেই সময় কোনও কারণে বেড়ে গেলেও সে জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না। বছরে ১৪টি ‘ক্যাজ়ুয়াল লিভ’ মেলে। অসুস্থতা এবং দুর্ঘটনাজনিত কারণে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিমার সুযোগসুবিধাও দেয় রাজ্য সরকার।
রাজ্য সরকারকে এটি লিখিত নির্দেশিকা দিতে হবে ভলেন্টিয়ারের ঠিক কি কি কাজ করতে হবে সে নির্দেশই দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি যুবককে বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে সরশুনা থানার বিরুদ্ধে। পরিবারের অভিযোগ ছিল দুজন সিভিক ভলেন্টিয়ার ওই যুবককে তুলে নিয়ে যান সঙ্গে পুলিশও ছিল কিন্তু সেই যুবক আর বাড়ি ফিরেনি।
পশ্চিমবঙ্গের সিভিক ভলান্টিয়ারদের পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ শুরু হচ্ছে। কি কি সুবিধা বাড়ছে?
তখনই সে পরিবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আইনজীবী নিহত আনিস খানের প্রসঙ্গ তুলতে গিয়ে সিভিক ভলেন্টিয়ারদেরই দায়ী করেন। তাই এই এই মামলায় রাজ্য সরকারকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন একটি লিখিত হলফনামা দিতে যাতে Civic Volunteer বা সিভিক ভলেন্টিয়ারদের কাজগুলো কি কি থাকবে। এমনটাই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি মান্থা।
মূলত Civic Volunteer বা সিভিক ভলেন্টিয়াররা অনেকেই নিজেদেরকে পুলিশের জায়গায় ভাবার চেষ্টা করে আর সেই থেকেই এই অপরাধমূলক কাজগুলো করে ফেলছেন তারা। নিজেদের হাতে আইনকে নিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন আর তার থেকে এই বিপদগুলো আসছে।
Written by Shampa Debnath