বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ৩৫১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। Bangla Shasya Bima / Crop Insurance Scheme এর মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিভাবে এই টাকা পাবেন জেনে নিন।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প
রাজ্য সরকার রাজ্যের জনসাধারণের জন্য একাধিক জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সূচনা করেছেন, যে প্রকল্প গুলোর মাধ্যমে রাজ্যের জনসাধারণের অনেকটাই আর্থিক দুরবস্থা দূর হচ্ছে। রাজ্যের মহিলা থেকে শুরু করে কন্যা, যুবক-যুবতী, বয়স্ক ও রাজ্যের অন্যান্য কর্মস্থলে যুক্ত মানুষদের জন্য একাধিক প্রকল্পের সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে, রাজ্যের কৃষকদের জন্য কৃষক বন্ধু প্রকল্পের সূচনার মাধ্যমে রাজ্য সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তা করে থাকেন।
কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক ও যন্ত্রপাতির যে পরিমাণ দাম তাতে কৃষকদের পক্ষে তাতে অর্থ বিনিয়োগ করা অনেকটাই কষ্টকর। কৃষকদের আর্থিক অনটন দূর করার জন্যই কৃষি কাজে অনুদান প্রদান করা হয় কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে। এই কৃষকদের জন্যই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো একটি সুখবর দিয়েছেন, যার মাধ্যমে উপকৃত হতে চলেছেন রাজ্যের কৃষকগণ।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ
বিগত কয়েক মাস ধরে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে রয়েছে রাজ্যে, তারফলে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও প্রবল বৃষ্টিপাতের দরুন গতবছর ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে ফসল উৎপাদন করেছিলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দরুন সে সমস্ত ফসল কাটার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার অনেকটাই ক্ষতি হয়ে যায়। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত কৃষকদের সহায়তা করার জন্যই পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘বাংলা শস্য বীমা প্রকল্প’ চালু করেছিলেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, যে পরিমাণ ফসল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হবে রাজ্যের কৃষকদের। অবশেষে এই প্রকল্পের অধীনে ক্ষতিপূরণের টাকা কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো শুরু হয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফ থেকে যে বাজেট পেশ হয়েছে তাতে রাজ্যের কৃষকদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও রাজ্যের কৃষকদের জন্য অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অনুদান হিসাবে রাজ্যের ৯ লক্ষ কৃষকদের জন্য ৩৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
৯ লাখ কৃষক টাকা পাবেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। সেই কথা মত গত শনিবার নবান্নে একটি বৈঠক হয়। এই বৈঠকে জানা যায়, খরিফ মরসুমে ধান চাষ করে যারা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তারাই মূলত এই ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন। ইতিমধ্যে বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো শুরু হয়েছে। বৈঠকে এটাও জানানো হয়, শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণই শেষ কথা নয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কৃষকদের জন্য আরও বাড়তি সুবিধা নেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। কৃষি দপ্তরের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, রাজ্যের আরো ৭১ লক্ষ ৯৮ হাজার কৃষকের নাম বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের তালিকায় নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এদের মধ্যে আলু চাষীদের সংখ্যা রয়েছে ১২ লক্ষ ১৩ হাজার।
বাংলা শস্য বীমা
রাজ্য সরকারের যে বাজেট পেশ হয়েছে সেই বাজেটে কৃষকদের জন্য অনেক নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো, এবার থেকে আলু এবং আখ চাষীদের জন্য বীমা প্রিমিয়াম বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন বাজেট অনুযায়ী, কৃষকদের বীমার জন্য কোন অতিরিক্ত খরচ করা হবেনা। অন্যদিকে, শস্য বীমা প্রকল্পের আওতায় আরো বেশি কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেই সাথে শস্যবীমা প্রকল্পে আরো বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হবে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের জন্য মোট ১০২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা ছিল, যা ২০২৩-২৪ সালে বাড়িয়ে ১১২৫ কোটি টাকা করা হয়। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে এই প্রকল্পে ১৩১৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন, কৃষক বন্ধুদের ৯০০০ টাকা করে দিচ্ছে। কারা এই টাকা পাবেন?
কৃষকদের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রাজ্য সরকারের পেশ করা বাজেটে রাজ্যের কৃষি কাজের ওপর অনেকটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কৃষিকাজকে আরো কিভাবে উন্নত করা যায় এবং সেই সাথে রাজ্যের কৃষকদের অর্থনৈতিক উন্নতি কিভাবে করা সম্ভব সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। ভবিষ্যতে কৃষকদের জন্য আরো বাড়তি সুযোগ সুবিধা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। রাজ্যের কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে অধিক উৎপাদন কি করে করা সম্ভব হবে এবং নতুন প্রযুক্তিতে চাষের পদ্ধতির উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের বাজারে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করাতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এই বাজেটে।
বাংলা শস্য বীমা এর টাকা কিভাবে পাবেন?
যে সমস্ত রাজ্যের কৃষক খারিফ চাষের জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন, তাঁরা নিশ্চিত থাকুন আপনাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা ঢোকা শুরু হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও যারা এখনো পর্যন্ত বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের আওতায় নাম নথিভুক্ত করেননি, তাদের নামও খুব শীঘ্রই যুক্ত হবে এই প্রকল্পে। আগামীতে কোন প্রাকৃতির দুর্যোগের ফলে ফসল ক্ষতিপূরণের জন্য তারাও এই প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণের অনুদান পেয়ে যাবেন।
Written by Shampa Debnath.